সিলসিলাহ-এ-আলিয়া কাদেরিয়ার সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
(toc)
বড়পীর গাউসুল আজম হযরত আবদুল কাদের জিলানী (রাদ্বিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু) কর্তৃক প্রবর্তিত, শাহান শাহে ছিরিকোট আল্লামা হাফেজ সৈয়্যদ আহমদ শাহ্ ছিরিকোটী (রাদ্বিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু) কর্তৃক প্রচারিত তরিকার নামই সিলসিলাহ-এ-আলিয়া কাদেরিয়া।” হযরত রাসূলে করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ৩৮ তম বংশধর হযরত ছিরিকোটী (রাদ্বিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু) উনবিংশ শতাব্দির ষাটের দশকে পাকিস্তানের উত্তর পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের ছিরিকোট শরীফে জন্ম গ্রহণ করেন। তৎকালীন পাকিস্তান ও ভারতের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে কুরআন-হাদীস-ফেকাহ্ ইত্যাদি বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রী অর্জন শেষে ইসলাম প্রচারে আত্মনিয়োগ করেন। তিনি আফ্রিকায় ক্যাপটাউন নগরে মুসলমানদের প্রথম জামে মসজিদ নির্মাণ করেন। ১৯২০ সালে আপন পীর মুর্শিদ গাউসে দাওরা খাজা আবদুর রহমান চৌহরভী (রাদ্বিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু) 'র নির্দেশে তিনি কাদেরিয়া | তরিকার গুরু দায়িত্ব নিয়ে রেঙ্গুন শহরে চলে যান। দীর্ঘ ষোল বছর তিনি রেঙ্গুনে সদয় অবস্থান করেন। এই দীর্ঘ সময়ে অসংখ্য মানুষ তাঁর সংস্পর্শে এসে শরীয়ত ও তরিকতের অমিয় সুধা পান করেন। তাঁর বরকতময় সান্ধিধ্যে এসে তারা দুনিয়া ও আখেরাতের প্রভূত কল্যাণ অর্জন করেন। উল্লেখ্য, তদানিন্তন কালে জীবিকার জন্য বাংলাদেশ থেকে বিশেষত চট্টগ্রাম থেকে বহু মানুষ বার্মায় পদার্পন করেন। এই সুবাধে তাদের অনেক সৌভাগ্যবান ব্যক্তি হুজুর কেবলা শাহানশাহে ছিরিকোট'র (রাদ্বিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু) সান্ধিধ্যে আসার সুযোগ পান ।
তৎকালীন সময়ে বার্মায় অবস্থানরত ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেক সহ বিশিষ্ট মুরিদানের আবেদনের প্রেক্ষিতে ১৯৩৫ / ১৯৩৬ সালের দিকে চট্টগ্রামে আসা-যাওয়া শুরু করেন। ১৯৪১ সালের ২৩ ডিসেম্বর বার্মায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের যে বোমা বিস্ফোরিত হয়েছিল তার পূর্বেই তিনি সেই ভবিষ্যতবাণী করে মুরিদানকে রেঙ্গুন ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন এবং নিজেও বার্মা মিশন সমাপ্ত করেন এবং ১৯৪২ থেকে ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত। সময়কালে চট্টগ্রাম থেকে সিলসিলার কার্যক্রম পরিচালনা করেন।
চট্টগ্রামে এ মহান অলিয়ে কামেলের আগমনের কথা বিদ্যুৎ গতিতে সর্বত্র ছড়িয়ে পড়লে অগণিত মানুষ প্রতিদিন তাঁর হাতে মুরীদ হতে থাকে। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আদর্শ সংরক্ষণ এবং ভ্রান্ত মতবাদীদের স্বরূপ উম্মোচনে তিনি চট্টগ্রাম ষোলশহরে ১৯৫৪ সালে 'জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলীয়া মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন যা বর্তমানে এশিয়ার বিখ্যাত দ্বীনি শিক্ষা কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। তাঁরই প্রতিষ্ঠিত আনজুমান-এ রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া নামক প্রসিদ্ধ সংস্থাটি বর্তমানে উক্ত জামেয়া সহ প্রায় শতাধিক দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে আসছে। ১৯৫৮ সালের সর্বশেষ সফরের সময় তিনি তাঁর শাহজাদা, মাতৃগর্ভের অলি হিসেবে পরিচিত হযরত হাফেজ মৌলানা সৈয়্যদ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু) কে তরিকৃতের মহান দায়িত্ব তথা খেলাফত প্রদান করেন। ১৩৮০ হিজরি ১১ জিলকদ শতাধিক বছরের ইহ জীবনের ইতি টেনে ছিরিকোট দরবারের রওজা শরীফে শায়িত হন। তখন তাঁর মুরিদান ছিল লক্ষাধিক । হযরত ছিরিকোটী (রাদ্বিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু)'র বেছালের পর থেকে দীর্ঘ ৩২ বছর তরিকৃতের এ দায়িত্ব পালন করেন তাঁর সাজ্জাদানশীন সাহেবজাদা, মাতৃগর্ভের অলি গাউসে জামান, সফল সংস্কারক, রাহনুমায়ে শরিয়ত ও তরিকৃত হযরত হাফেজ আল্লামা সৈয়দ মোহাম্মদ তৈয়্যব শাহ (রাহমাতুল্লাহ আলাইহি)। শাহান শাহে ছিরিকোর্ট (রাদ্বিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু) দ্বীন ও তরিকৃতের যে বীজ বপন করেছিলেন তাকে এক মহিরূহে রূপান্তর করেছিলেন হযরত তৈয়্যব শাহ (রাহমাতুল্লাহ আলাইহি)। এ সময় তাঁর হাতে ঢাকার মুহাম্মদপুর “কাদেরীয়া তৈয়্যবিয়া আলীয়া” মাদ্রাসা, চট্টগ্রাম হালিশহরে মাদরাসা-এ-তৈয়্যবিয়া ইসলামিয়া সুন্নিয়া, চন্দ্রঘোনা তৈয়্যবিয়া অদুদিয়া সুন্নিয়া মাদ্রাসা সহ প্রায় অর্ধশত দ্বীনি আধ্যাত্মিক কেন্দ্ৰ গড়ে উঠে। তাঁর প্রবর্তিত জশনে জুলুছে ঈদে মিলাদুন্নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আজ সারাদেশে, এমনকি বর্হিবিশ্বেও বিভিন্ন সংস্থা কর্তৃক উদ্যাপিত হচ্ছে। তাঁর উচুস্তরের বেলায়ত তথা গাউসিয়াতের আকর্ষণে লক্ষ লক্ষ নারী-পুরুষ আজ আলোর পথের যাত্রী হয়েছে। পরিশেষে, ১৯৮৬ সালে হুজুর কেবলা তৈয়্যব শাহ গাউসুল আজম জিলানী (রাদ্বিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু) নামে ১৪১৩ হিজরী ১৫ জিলহজ্ব আধ্যাত্মিক আদর্শের সংগঠন “গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশ” প্রতিষ্ঠা করেন এবং ১৯৯৩ সালের ৭ জুন সোমবার এ নশ্বর দুনিয়া হতে পর্দা করেন ।
১৯৮৬ সনের পর থেকে তাঁরই শাহজাদা ও খলিফা রাহনুমায়ে শরিয়ত ও তরিক্বত হযরত সৈয়্যদ মোহাম্মদ তাহের শাহ্ মাদ্দাজিল্লুহুল আলী বাংলাদেশে তরিক্বতের এ মহান দায়িত্ব পালন শুরু করেন, যা আজ পর্যন্ত অব্যাহত রয়েছে। বর্তমানে শাহানশাহে ছিরিকোট ও হুজুর কেবলা (রাদ্বিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু) প্রদর্শিত 'সিলসিলাহ-এ আলিয়া কাদেরিয়া ফুলে ফলে সুশোভিত হচ্ছে। দিন দিন তরক্কির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে গাউসুল আজম দস্তগীর (রাঃ)'র শরিয়ত ও তরিক্বতের এই কাফেলা ।
(ads1)
সিলসিলায়ে আলিয়া কাদেরিয়ার সংক্ষিপ্ত ছবক নির্দেশিকা
ছবক : পুরুষদের জন্য
ক) ফজরের নামাজের পর :২. লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ্। ২০০ (দুইশত) বার
৩. ইল্লাল্লাহ্। ২০০ (দুইশত) বার
৪. আল্লাহু। ২০০ (দুইশত) বার
২. দরূদ শরীফ (পূর্ব বর্ণিত নিয়মে) ১০০ বার।
মাগরিবের তিন রাকাআত ফরজ ও দুই রাকাআত ছুন্নত আদায়ের পর দুই রাকাআতের নিয়ত করে প্রতি রাকাআতে একবার ছুরা ফাতেহা (আলহামদু শরীফ) ও তিনবার ছুরা এখলাছ (কুলহুয়াল্লাহু আহাদ) সহকারে তিন নিয়তে ছয় রাকাআত নামাজ আদায় করতে হবে।
নিয়ত : নাওয়াইতু আন উছাল্লিয়া লিল্লাহে তা'আলা রাকাআতাই ছালাতিল আওয়াবিন, মোতাওয়াজ্জেহান ইলা জিহাতিল কা'বাতিশ শরীফাতে আল্লাহু আকবর ।
২. ইল্লাল্লাহ্। ২০০ (দুইশত) বার
৩. আল্লাহু। ২০০ (দুইশত) বার
টীকা : ফজর ও এশার নামাজের পর কোন কাজ থাকলে অথবা শারীরিক অসুবিধাবোধ করলে যিকরসমূহ ফজর ও এশার নামাজের পূর্বেও আদায় করার অনুমতি আছে । যিকির ছাত্রদের জন্য একশত বার করে।
ছবক : মহিলাদের জন্য
টীকা: ফজর ও এশার নামাজের পর কোন কাজ থাকলে অথবা শারীরিক অসুস্থতা বোধ করলে যিকরসমূহ ফজর ও এশার নামাজের পূর্বেও আদায় করার অনুমতি আছে।
- তাওবা করলে সমস্ত গুনাহ মাফ হয়ে যায় কিন্তু বান্দার হক (অপরের (হক) অর্থাৎ পাওনা বান্দা মাফ না করলে আল্লাহও মাফ করেন না।
- কবরে আল্লাহকে ডাকার সুযোগ নাই, তাই মৃত্যুর পূর্বে কবরের জন্য যা কিছু নেক আমল করার তা করতে হবে।
- যে কোন উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়ায় মান্নত করুন। কাজ হওয়ার পর সঙ্গে সঙ্গে মান্নত আদায় করুন।
- জামেয়ার দান বাক্স প্রত্যেকের ঘরে, অফিসে দোকানে রাখুন। প্রতিদিন কিছু টাকা দান করুন, ছদকায়ে যারিয়ার ছওয়াব পাবেন।
- আলমগীর খানকা শরীফ, হযরত ছৈয়দ আহমদ শাহ্ ছিরকোটি (রঃ) রোড, ষোলশহর, চট্টগ্রাম-এ নিয়মিত গেয়ারবী শরীফ ও খতমে গাউসিয়া অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশগ্রহণ বাঞ্চনীয়।
অবশ্যই করণীয় :
- পাঁচ ওয়াক্ত নামায অবশ্যই আদায় করতে হবে।
- হুযুর কেবলার দেওয়া ছিলছিলার অযিফা (ছবক) আদায় করতে বাধ্য থাকবে।
- বাতিল ফিরকা (যারা রসুলে পাককে মাটির মানুষ বলে, যারা ফাতেহাখানী করেনা, মাজার শরীফে যেতে নিষেধ করে, মিলাদ শরীফ কেয়াম করেনা, তাদের সাথে সম্পর্ক রাখা যাবে না।
- জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়াসহ আনজুমান আওতাধীন প্রতিষ্ঠানসমূহে সাহায্য করতে হবে।
- অপরের পাওনা অবশ্যই আদায় করতে হবে, আল্লাহ মাফ করবেন না।
মাশায়েখ হযরাতের গুরুত্বপূর্ণ বাণী
* জামেয়া কী খেদমত কো আপ জুমলা ভাইয়ো! নম্বরে আউয়াল মে রাহ্মেহ্, দুনিয়া কী ধাঙ্গো আওর কামো দোছরে, তেছরে নম্বর মে রাক্ষেহ। উছী হিছাব ছে আপ ভাইয়ো কে ছাভী এছাহী মুয়ামালা হোগা, আপ্কে তামাম্ নেক্ কামো কো উছী তরতীব্ ছে ছারাঞ্জাম দিয়া জায়েগা, ইনশা আল্লাহ। - হযরত সৈয়্যদ আহমদ শাহ সিরিকোটি (রাহ.)
* মুঝছে মুহাব্বত্ হ্যায় তো মাদ্রাসা কো মুহাব্বত করো, মুঝেহ দেখনা হ্যায় তো মাদ্রাসা কো দেখো। - হযরত সৈয়্যদ আহমদ শাহ্ সিরিকোটি (রাহ.)
* আপনি যাকাত কো চার হিসসা করকে এক হিসসা জামেয়া কি মিসকীন তোলাৰোঁ কো দিয়া করো, বাকী তিন হিসসা আপনে হকদার মিসকীনোঁ কো তকুসীম কিয়া করো। - হযরত সৈয়্যদ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ (রাহ.)
* খেদমতে জামেয়া আপ লোগোঁকে দো-জাহান কি কামিয়াবী আওর তরক্কী কা আজীমুশ্শান উছিলা হ্যাঁয়। খেদমতে জামেয়া মুর্শিদে বরহক্ কী তরফ ছে বল্কেহ্ হাজরাত কী তরফ ছে আপ্ ভাইয়োকী ডিউটী মে দাখেল হ্যাঁয়। - হযরত সৈয়্যদ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ (রাহ.)