বড়দের জন্য স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির উপায় - Memory Enhancement for Adults

Join Telegram for More Books
বড়দের জন্য স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির উপায় - Memory Enhancement for Adults

বড়দের জন্য স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির উপায়

কোনো কিছু দেখে, শুনে বা ভাবা তথ্যকে মগজে জমা করে রেখে প্রয়োজনে সেই তথ্যকে বের করে এনে কাজে লাগানোই হলো স্মৃতিশক্তি। স্মৃতিশক্তি ধরে রাখে মস্তিষ্কে থাকা কয়েক হাজার কোটি স্নায়ুকোষ বা নিউরন যা দুর্ধষ নেটওয়ার্ক। এই নেটওয়ার্কের অত্যাধুনিক যেকোনো নেটওয়ার্কের চেয়ে কয়েক লাখ গুণ কার্যকরী।

স্মৃতি বড় রহস্যময়। এটা বাড়ানো যায় স্মৃতিশক্তির চর্চা করে। মস্তিষ্ককে অলস বসিয়ে না রেখে যত বেশি এর চর্চা বাড়ানো যায়। তত বড় হবে তোমার মেমোরি নেটওয়ার্ক। নেটওয়ার্ক যত বাড়বে তত বাড়বে স্মৃতির ধার। ছাত্রজীবনে নানা বিষয়ে চর্চা, পড়াশোনা, আলোচনা যেকোনো মানুষের মগজের নিউরোনাল রিজার্ভ বাড়ায়। রিজার্ভ যত বাড়ে, স্মৃতির তীক্ষ্ণতা তত বাড়ে । ছাত্রজীবনে নানা বিষয়ে বেশি পড়াশোনা করতে হয়। আলোচনা করতে হয় অনেক বিষয় নিয়ে যেখানে মগজ কাজে লাগে বেশি। শুধু পাঠ্যবই নয়, কম বয়স থেকেই পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি নানা বিষয়ের বই, ম্যাগাজিন পড়ার অভ্যাস যেন সঠিক পদ্ধতিতে, সঠিক পরিবেশ হয়। তুমি যত মস্তিষ্কের ব্যবহার করবে, তোমার স্মৃতিশক্তিও তত ধারালো হবে। নতুন খেলা শেখা, খবরের কাগজে, নতুন নতুন পাজল বা ক্রসওয়ার্ড চর্চা করা সম্ভব হলে প্রতিদিনই করবে।

আমরা চাই আমাদের সবকিছু যেন মনে থাকে। বাস্তবে সেটা সম্ভব নয়। কিন্তু মনে রাখার পরিমাণ বাড়ানো সম্ভব। এজন্য কিছু নিয়ম-কানুন মানতে হবে। পড়ার বিষয়কে স্মৃতিতে আত্মস্থ করে নিতে হলে জোরে শুদ্ধ উচ্চারণে পড়তে হবে এবং বার বার পড়তে হবে, তাহলেই মনে থাকবে বেশি। একবার রিডিং হ্যাবিট তৈরি হয়ে গেলে নানা বিষয়ে পড়াশোনার আগ্রহ বাড়বে। পড়ার পাশাপাশি বারবার লেখা স্মৃতি সহায়ক। সুষম ও পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে, বয়স অনুযায়ী শরীরচর্চা করতে হবে।

শরীর সুস্থ থাকলে মন সুস্থ থাকে। তাই নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে এবং পরিমিত আহার করতে হবে। কানে শুনতে, চোখে দেখতে অসুবিধা থাকলে ডাক্তার দেখিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। ঘুমের বড়ি না খাওয়াই ভালো। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাবে। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করলে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, চোখের বা কানের সমস্যা সহজে ধরা পড়বে। বিষণণতা থাকলে তা ধরা পড়বে। বিষণণতাবিরোধী ওষুধ সেবনে বিষণ্‌ণতা যত কমবে তোমার স্মৃতিশক্তি তত বাড়বে ।

বহু কর্ম একসঙ্গে করতে গেলে মনোযোগ নষ্ট হবে, এটা পরিহার করতে হবে। অধিকতর জটিল বিষয়গুলোর মৌলিক ধারণার ওপর জোর দাও, বিচ্ছিন্নভাবে মুখস্থ করার চেষ্টা করবে না। জটিল বিষয়টি অন্যকে নিজের ভাষায় বোঝানোর ক্ষমতা অর্জন করো। তোমার মস্তিষ্ক নিয়মিত ব্যবহার না করলে তার কার্যক্ষমতা কমে যাবে, সুশিক্ষিত বুদ্ধিমান ব্যক্তি যারা নিয়মিত বুদ্ধির চর্চা করে স্মৃতি হ্রাস তুলনামূলকভাবে কম হয়।

মনটাকে আনন্দে রাখো, প্রাণখুলে হাসো, কাজে লাগাও মনের অসীম কল্পনাশক্তি ও সৃজনশীলতাকে । নানা জ্ঞান-বিজ্ঞান যতবেশি আয়ত্ত করবে, ততই একটা একটা করে ফুটতে থাকবে মনের নতুন চোখ। মনের চোখ যত বাড়ে মেধা, স্মৃতি, বিচার-বিশে যণের ক্ষমতাও তত বাড়ে। কম বয়স থেকে মস্তিষ্ককে যত বেশি কাজে লাগানো যাবে, বেশি বয়সে স্মৃতি লোপের আশংকা তত কম।

মনে রাখার জন্য কল্পনা শক্তি ব্যবহার খুব জরুরি। যে কল্পনাশক্তিকে যত চমৎকারভাবে ব্যবহার করতে পারবে তার মনে থাকবে তত বেশি। যেসব ছাত্র নিয়মিত পড়াশোনা করে, তারা ভাল মনে রাখতে পারে। প্রাত্যহিক পড়ার রুটিনে পরিবর্তন আনো, মাঝে মধ্যে প্রাত্যহিক রুটিন পরিবর্তন স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এছাড়া রাতে পড়াশোনা করে পরদিন সকালে বিষয়টি রিভিউ করো।

আমাদের প্রত্যেকেই চাই যে আমাদের ব্রেইন যেন সব সময় সুস্থ থাকে সেই জন্য আমাদের সব চেয়ে যেটি প্রয়োজনীয় দেখার জিনিস সেটি হল আমাদের খাবার প্রণালী কারণ এটার উপর নির্ভর করে আমাদের ব্রেইনের সুস্থতা এবং উন্নতি নিম্নে দেয়া হল- মস্তিষ্ক বিজ্ঞানীদের মতে, কোলিনসমৃদ্ধ খাদ্য খেলে মেধাশক্তি বাড়ে। প্রতিদিন মস্তিষ্কের জন্য ৪০০-৯০০ মিলিগ্রাম কোলিন প্রয়োজন। একটি হাঁস বা মুরগির ভিনে ৪০০ মিলিগ্রাম, ছোট দু'টুকরা মাছ থেকে ১০০ মি. গ্রা. ৪-৫টি যকৃতের টুকরায় ৬০০ মি. গ্রা. কোলিন থাকে।

এছাড়াও ফুলকপি, বাঁধাকপি, সয়াবিন, দুধ, বাদাম ইত্যাদি খাদ্যে প্রচুর কোলিন থাকে। বিশেষ করে সয়াবিন নিয়মিত খেলে শেখার, বুঝার ও স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়। বৃদ্ধ বয়সে ভিটামিন 'বি'-এর অভাব হলে স্মৃতিশক্তি লোপ পায়। ভিটামিন 'বি' রয়েছে ভাল, শস্যদানা, বাদাম, সবুজ শাক-সবজি, চাল, গম, কলা, গাজর, সামুদ্রিক মাছ ইত্যাদি খাদ্যে। ভিটামিন 'সি'-এর অভাবে মস্তিষ্কের বাস্তবের সাথে বুঝার ক্ষমতা অনেকাংশে লোপ পায়। ভিটামিন সি বেশি থাকে আমলকি, পেয়ারা, আমড়া, আম, লেবু, বাতাবি লেবু, জলপাই ইত্যাদিতে। মস্তিষ্কের শক্তি বাড়াতে আয়রনের প্রয়োজন। মস্তিষ্কের মধ্যে সবসময় শরীরে রক্তের প্রায় ২০ ভাগ রক্ত চলাচল করে। রক্ত শোধনের জন্য প্রয়োজন অক্সিজেন। রক্তের লাল রঙের উপাদান হিমোগোবিন হলো অক্সিজেনের বাহক। আয়রন হচ্ছে হিমোগোবিনের প্রধান সৃষ্টিকারী।

মস্তিষ্কে অক্সিজেনের অভাব হলে মনোযোগ ও নতুন কিছু বুঝা বা শেখার আগ্রহ কমে যায় এবং মনের চঞ্চল ভাবটাও নষ্ট হয়। কথাবার্তায় আদব-কায়দা হ্রাস পায়। আয়রন বেশি থাকে কচুশাক, লালশাক, পালংশাক, কলা, নটেশাক, মূলাশাক, বরই, তরমুজ, বরবটি, গুড় ইত্যাদি খাদ্যে। এসব আয়রনসমৃদ্ধ খাবারের সাথে ভিটামিন সি জাতীয় খাবার খেলে সহজেই হজম হয়। বোরন ও জিংক স্মৃতিশক্তি ও মনোযোগ বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। আপেল, আঙ্গুর, ডাব, টমেটো, গম, দুধ এসব খাদ্যে বোরন ও জিংক থাকে। ১০ বছর বয়সের মধ্যে শিশুদের পুষ্টিকর খাদ্য খাওয়ালে স্মরণশক্তি বাড়ে। গর্ভবতী মহিলারা কোলিনসমৃদ্ধ ও পুষ্টিকর খাদ্য খেলে গর্ভের শিশু মস্তিষ্ক গঠনের সময় স্মরণশক্তি ও বুদ্ধি বৃদ্ধির উপাদান সৃষ্টি হয়। বয়স্কদের জন্য মাল্টিভিটামিন ট্যাবলেট খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

তেল, চর্বি, ঘি জাতীয় খাদ্য স্মরণশক্তি হ্রাস করে। চর্বি জাতীয় খাদ্য উপাদান রক্তের সাথে মিশে গিয়ে মস্তিষ্কের অত্যন্ত সূক্ষ্মবাহী নালীগুলোর মধ্য দিয়ে রক্ত চলাচল ব্যাহত করে। খাবারে মিশ্রিত কৃত্রিম রাসায়নিক পদার্থও মস্তিষ্কের জন্য ক্ষতিকর। অ্যালকোহল জাতীয় পদার্থ মানুষের স্মরণশক্তিকে মুছে ফেলে । মস্তিষ্কের প্রোটিন তৈরির সময় অ্যালকোহল বাধা দেয়। ফলে নতুন স্নায়ুকোষ জন্মাবার সম্ভাবনা চিরদিনের জন্যই বন্ধ হয়ে যায়। ঘুমের ওষুধ স্মরণশক্তি হ্রাস করে।
Tags

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Learn More
Ok, Go it!