ভালো ছাত্র-ছাত্রীর করণীয়
প্রাথমিক লেভেলের শিক্ষার্থী থেকে মাস্টার্স লেভেলের শিক্ষার্থীরাও এটিতে অনুকরণ বা অনুসরণ করে খুব সহজেই নিজেকে একজন মেধাবী শিক্ষার্থী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পার। নিচে এগুলো সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।ছাত্রজীবনের প্রধান তপস্যা হলো পড়ালেখা। আর পড়া ও লেখা মানে পড়ালেখা অথবা লেখা ও পড়া মানে লেখাপড়া। ছাত্র হলে লিখতে ও পড়তে হবে। অর্ধেক লেখা আর অর্ধেক পড়ার নাম হলো লেখাপড়া বা পড়ালেখা। তাই পড়ালেখা করতে হবে, এর কোনো বিকল্প নেই। প্রথমে কোনো Tropic বা বিষয় বা প্রশ্ন পড়বে তারপর এটি লিখবে, তবেই লেখাপড়া পূর্ণাঙ্গতা লাভ করবে।
নিয়মিত রুটিনওয়ারি লেখাপড়া করবে। বাসায় রাতে, সকালে, বিকেলে স্কুল বা কলেজ থেকে এসে পড়ার জন্য একটি রুটিন তৈরি করবে। প্রতিদিন কমপক্ষে ১০ ঘণ্টা পড়ার রুটিন তৈরি করবে। স্কুল বা কলেজে যদি সুযোগ থাকে তবে সেখানে নিয়মিত। যে বিষয়টি পড়ানো হয়েছে তার ওপর Library work করবে, এতে করে তোমার ওই পড়াটার ওপর Conception ক্লিয়ার হবে এবং নিজের ভাষায় এটির ওপর যে কোনো ধরনের প্রশ্ন আসুক উত্তর লিখতে পারবে।
প্রত্যেকটি বিষয়ের ওপর প্রধান একটি করে বোর্ড বা বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্ধারিত মেইন বই রাখবে। মেইন বইটি প্রত্যেক লাইনওয়ারি পড়বে ভালোভাবে বোঝে। তারপর বিভিন্ন লেখকের Reference বা সাহায্যকারী বই পড়বে। লাইব্রেরিতে এ ধরনের বই থাকে, এগুলো এনে বাসায় বসে পড়বে। যদি স্কুল বা কলেজের লাইব্রেরিতে Reference বই না থাকে তবে ৫/৬ জন বন্ধুবান্ধব ৫/৬ লেখকের বই কিনে তারপর পড়ালেখা করবে।
ক্লাসের পড়ুয়া ছেলেমেয়েদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করবে বেশি। ৫/৬ জন বন্ধুবান্ধব। এমন হবে যে সবসময় একত্রে চলবে, একরে ক্লাস করবে, ক্লাসের ফাঁকে ক্লাসে যে বিষয়টি আলোচনা করা হলো সেটি নিয়ে পরস্পরের মধ্যে আলোচনা করবে। এতে করে দেখবে লেখাপড়া বেশিরভাগই বুঝে গেছ। তারপরও যদি তোমরা কোথাও দেখ যে বুঝছ না তখন পরে ক্লাসে স্যারের কাছে বিনয়ের সঙ্গে প্রশ্ন করে জেনে নেবে। এতে করে তোমাদের লেখাপড়া আয়ত্ত করা খুব সহজ হবে।
ক্লাসে প্রতিটি বিষয়ের জন্য আলাদা আলাদা খাতা বানাবে। খাতায় প্রত্যেক ক্লাসের ক্লাস নোট লিখবে। খাতার ওপরে বিষয়, Tropic-এর নাম, তাং, স্যারের নাম লিখবে।
প্রতিদিন ক্লাস শেষে বাসায় গিয়ে পড়ার টেবিলে বসে ক্লাস নোটে যা লিখেছ তা প্রথমে পড়বে দুতিনবার। এরপর মেইন বই থেকে ওই অংশটুকু দু'তিনবার পড়বে লাইন বাই লাইন। এরপর সাহায্যকারী বা Reference বই থেকেও ওই অংশটি পড়বে। এতে করে দেখবে তোমার পড়া সম্পূর্ণ আয়ত্তে এসেছে। তারপরও যদি কোনো কিছু বোঝার বাকি থাকে তা তোমার বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে আলাপ করে জেনে নেবে। এতেও যদি কোনো অপূর্ণতা থাকে তবে ক্লাসে স্যারদের কাছে প্রশ্ন করে জেনে নেবে। এভাবে খুব সহজে তুমি বৈজ্ঞানিক উপায়ে পড়ালেখা আয়ত্ত করতে পারবে। পরে এর থেকে নিজের ভাষায় যে কোনো উত্তর দিতে পারবে।
স্কুল-কলেজে প্রতি ক্লাসে শ্রেণী শিক্ষক যে Lecture দেবে তা যতদূর সম্ভব লিখবে। তবে স্যারের কথা বুঝেশুনে তারপর নোট করবে। ক্লাস শিক্ষক বইয়ের চিত্র, তালিকাসূচি, চার্ট, মানচিত্র ছাড়া নিজে বানিয়ে বোর্ডে অঙ্কন করে থাক, সেগুলো অবশ্যই যথাসম্ভব অঙ্কন করবে এবং নোট করার সময় ক্লাস নোটকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে বা based ধরে করবে। ক্লাস নোট, নিজের ভাষায় লিখবে এবং পরে নোটও করবে নিজের ভাষায়। এতে করে বেশি নম্বর পাবে। বইয়ের ভাষা কখনওই হুবহু লিখবে না।
ভালো বা মেধাবী ছাত্রছাত্রীর সবচেয়ে বড়গুণ নিয়মিত ক্লাস করা। তাই নিয়মিত ক্লাস করতে হবে, কোনোক্রমেই ক্লাস মিস করবে না। একটি সাধারণ প্রবাদ আছে, যে নিয়মিত বা প্রতিদিন ক্লাস করে সে কখনোই খারাপ করতে পারে না। কারণ দেখা যায়, পরীক্ষার সময় আনকমন প্রশ্ন এসেছে, তখন যে নিয়মিত ক্লাস করে তার স্যারের ক্লাসের অঙ্গভঙ্গি এগুলো মনে পড়ে। ওইসব অঙ্গভঙ্গি বা Lecture মনে পড়ে যায়, তাই আনকমন প্রশ্নটিও খুব সহজেই উত্তর করতে পারবে। আর সবসময় ক্লাসে স্যারের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনবে, তারপর নোট লিখবে। ক্লাসে কখনোই কথা বলবে না।
ভালো বা মেধাবী ছাত্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো সুন্দর হস্তাক্ষর। সুন্দর হাতের লেখা হলে তুমি খুব সহজেই ভালো ফলাফল অর্জন করতে পারবে। কোনোক্রমেই পেঁচানো, অগোছালো ধরনের লেখা কেবল নিম্নমানের ছাত্ররাই লিখে বেশি। লেখার মধ্যে কাটাছেঁড়া, ঘষামাজা ধরনের কোনো লেখা লিখবে না। সব সময় লেখা যাতে ঝকঝকে-তকতকে দেখা যায় সেদিকে নজর দেবে। - হাতের লেখা সুন্দর করার জন্য ছোটবেলা থেকে সুন্দর হস্তাক্ষর দেখে লিখে অভ্যাস করতে হবে।
সুন্দর চিত্রাঙ্কন জানা এটিও ভালো ছাত্রের অন্যতম লক্ষণ। পরীক্ষায় ভালো ও সুন্দরভাবে চিত্র অঙ্কন করতে হলে ছোটবেলা থেকেই চিত্রাঙ্কনে পারদর্শী হতে হবে।
ভালো ছাত্রের অন্যতম আরও একটি বৈশিষ্ট্য হলো, ক্লাসে দেরি করে না যাওয়া বা ক্লাস ফাঁকি না দেয়া। সবসময় ভালো ছাত্ররা আগে ক্লাসে গিয়ে সামনের দিকে বসতে চেষ্টা করে। ক্লাসের প্রথম থেকে থাকলে স্যার যে লেকচার দেবে তা পুরোটা বুঝবে। প্রথমদিকে আগের ক্লাসের কিছু অংশ টেনে তারপর শুরু করে তাই প্রথম উপস্থিত না। থাকলে বোঝা যাবে না, কোনটির পর কোনটি শুরু করল। ক্লাসের মাঝপথে গেলে তেমন কিছুই বুঝতে পারবে না। এতে ক্লাস করলে ঠিকই কিন্তু কিছুই বুঝলে না। আর সামনে বসলে শিক্ষকের নজর থাকে, তাই মাঝে মধ্যে প্রশ্ন করলে উত্তর দেওয়া যায়। এতে করে নিজের ভেতর অনুপ্রেরণা জাগে পড়ার জন্য। প্রতিদিন ভালোভাবে পড়া পড়ে আসবে এবং ভালো ছাত্রে পরিণত হবে।
প্রতিদিন স্কুল-কলেজে যা পড়া বাসায় দেয় তা অবশ্যই ভালোভাবে পড়ে আসবে যাতে করে স্যার কোনো প্রশ্ন করলে উত্তর দিতে পার। একজন ভালো বা মেধাবী শিক্ষার্থীর প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো নিয়মিত H. W. বা বাসার কাজ বা পড়া বাসায় পড়ে এসে দেওয়া।
স্কুলে রুটিনে যতগুলো ক্লাস থাকে ততগুলো ক্লাসের বই-খাতা অবশ্যই আনবে। বিষয়ভিত্তিক ক্লাসে ওই বইগুলো ধরে দেখবে কোথায় পড়ানো হচ্ছে এবং কোনটুকু স্যার পড়ায় তাও দেখবে। স্কুলে বই ধরে পড়ানো হয় এবং বই থেকে প্রশ্নপত্র দাগিয়ে দেওয়া হয়। তাই অবশ্যই বই নিয়ে যাবে।
ক্লাস নোট, মেইন বই ও সাহায্যকারী বই নিয়ে পুরো সিলেবাসের টপিক্স ধরে নোট করবে অথবা প্রশ্নভিত্তিক নোট করবে এবং পরীক্ষার সময় সেসব নোট ধরে ধরে পড়বে ও পরীক্ষা দেবে। নোটটি অবশ্যই বইয়ের, ক্লাসের বিভিন্ন চিত্র, তথ্য-উপাত্ত, তালিকাসূচি, চার্ট, মানচিত্র ইত্যাদি ধরে বিষয়ভিত্তিক সুন্দরভাবে তৈরি করবে। পরীক্ষায় যখন এভাবে উন্নতমানের নোট ধরে পরীক্ষা দেবে তখন পরীক্ষক মনে করবে এটি কোনো ভালো ছাত্রের খাতা। তাই নম্বর প্রদানের ক্ষেত্রে কোনোরূপ কার্পণ্য করবে না। এতে তুমি খুব সহজেই ভালো ফল অর্জন করতে পারবে।
তোমাদের বন্ধুরা, যারা নিয়মিত লেখাপড়া নিয়ে আলোচনা করে, তারা ক্লাসের ফাঁকে বর্তমান সময়ে আবিষ্কার হয়েছে এমন ধরনের নতুন নতুন জিনিস নিয়ে আলোচনা করতে পার। বর্তমান বিশ্বের আবিষ্কার, বিস্ময়কর জিনিস ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করতে পার। এতে তোমাদের জ্ঞানের পরিধি বাড়বে।
বাসায় আধুনিক প্রযুক্তিগত ব্যবহারগুলো শিখতে পার। যেমন কম্পিউটার, ইন্টারনেট, ই-মেইল ইত্যাদি। কম্পিউটারসহ আধুনিক প্রযুক্তিগত যন্ত্রপাতিও নিজে ব্যবহার করতে শিখবে। এতে তোমার দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে।